সিংগাইর মিশ্র ফলবাগান স্থাপনে তরুণ উদ্যোক্তা মো: আতিকুর রহমান
শান্তা ইসলাম
মোঃ আতিকুর রহমান একজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। পেশায় একজন কম্পিউটার অপারেটর হলেও কৃষির প্রতি তার অপরিসীম আগ্রহ ও ঝোঁক থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন আধুনিক ফলবাগান পরিদর্শন করেন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন মাঠ দিবস ও উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করে কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ হন এবং ২০১৯ সালের মে মাসে উপজেলা কৃষি অফিস, সিংগাইর মানিকগঞ্জে যোগাযোগ করেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শমতে ৫ জন উদোক্তা মিলে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ১৫ একর জায়গায় ৫২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মাল্টা, পেয়ারা ও কুল গাছের চারা দিয়ে মিশ্র ফল বাগান স্থাপন করেন। কিন্তু ২০২০ সালের আগস্ট মাসের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় বাগান প্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ৪২ লাখ টাকার লোকসান হয়।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তরুণ এই উদ্যোক্তা যখন দিশেহারা তখন কৃষি বিভাগ তাদের পাশে দাঁড়ায়। ২০২০ সালের নভেম্বরে বন্যা বিধ্বস্ত বাগান এবং প্রায় অর্ধকোটি টাকা লোকসানের হতাশাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কৃষি বিভাগ দ্বিগুণ উদ্দীপনা দিয়ে নতুন করে বাগান করার উৎসাহ প্রদান করে। প্রথমেই বন্যা প্রতিরোধী ব্যবস্থা হিসেবে বাগানের চারদিকে বাঁধ স্থাপন এবং ফলগাছ রোপণের জন্য উঁচু বেড করে সর্জন পদ্ধতিতে সেচের ব্যবস্থা করার পরামর্শ প্রদান করা হয়। ফলবাগানের পাশাপাশি নার্সারি করার দিকনির্দেশনা দেয়া হয়।
২০২০-২১ অর্থবছরে উত্তম কৃষি চর্চা কর্মসূচির আওতায় মোঃ আতিকুর রহমানকে ১০০ শতকের একটি বাণিজ্যিক ফলবাগান প্রদর্শনী, তার বাগানের অংশীদার গাজী কামরুজ্জামান কে ১০০ শতকের একটি বাণিজ্যিক ফলবাগান প্রদর্শনী, আমজাদ হোসেনকে ১টি বসতবাড়িতে ফলবাগান প্রদর্শনী, সুমা আক্তারকে ১টি বসতবাড়িতে ফলবাগান প্রদর্শনী প্রদান করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে আতিকুর রহমানকে পুনরায় ১টি বসতবাড়িতে ফলবাগান প্রদর্শনী দেয়া হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে অপ্রচলিত ফলবাগান কর্মসূচির আওতায় ১টি ফলবাগান প্রদর্শনী প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ২০২১-২২ অর্থবছরে পুষ্টিবাগান প্রকল্পের আওতায় নার্সারির সরঞ্জামাদি সিকেচার, বাডিং নাইফ, ফুট পাম্প, হ্যান্ড স্প্রেয়ার প্রদান করা হয় এবং এই বিষয়ে তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতায় বর্তমানে আতিকুর রহমান তার বাগান ১৫ একর থেকে ২৫ একরে সম্প্রসারিত করেছেন। বর্তমানে তার বাগানে ১৩ ধরনের ১৫টি জাতের মোট ১২১৪০টি ফল ও অন্যান্য উচ্চমূল্য ফসলের ফলবান গাছ রয়েছে যেখান থেকে তিনি খরচ তুলেও ৮৯৫০০০০ টাকা মুনাফা অর্জন করেছেন। তার বাগানের বর্তমানের সার্বিক চিত্র সারণি-১ দ্রষ্টব্য।
আতিকুর রহমানের হিসাব মতে, প্রতি বছর এই ২৫ একর বাগান থেকে তার আয় হবে ৫০ লাখ টাকা। আগামী ৩ বছরে তার বিগত ক্ষতি পুষিয়ে মূলধন উঠেও লাভ থাকবে প্রায় ২০ লাখ টাকা। ৪র্থ বছর থেকে পুরোটাই লাভে থাকবে।
ফলবাগানের পাশাপাশি স্থায়ী মুনাফার জন্য কৃষি বিভাগের পরামর্শ মতে তিনি একটি সমৃদ্ধ নার্সারি গড়ে তুলেছেন যেখানে ১৮,৮৫০টি আধুনিক জাতের ফলের চারা রয়েছে। এ যাবৎ ১০০০০টি চারা বিক্রয় করে তিনি ৬৪৪৬০ টাকা মুনাফা অর্জন করেন। ভবিষ্যতে এ নার্সারি সম্প্রসারণের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। আতিকুর রহমান এর নার্সারির বর্তমান চিত্র সারণি-২ দ্রষ্টব্য।
মোঃ আতিকুর রহমানের এই ফল বাগান দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তার বাগানের সাফল্য চারদিকে ছাড়িয়ে পড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুযোগ্য মহাপরিচালক মোঃ বেনজীর আলম মহোদয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত কৃষি সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলাম মহোদয়কে এই বাগান পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান। গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত কৃষি সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলাম সবুজ বাংলা এগ্রো ফার্মটি পরিদর্শন করেন। সিংগাইর উপজেলায় এমন একটি সুদৃশ্য বাগান দেখে তিনি অভিভূত হন এবং সাধুবাদ জানান।
একজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক থেকে আতিক এখন সফল উদ্যোক্তা। দেশের বিভিন্ন স্থানে চারা সরবরাহ এবং ফল বিক্রয় করছেন। মোঃ আতিকুর রহমানের যোগাযোগের নাম্বার-০১৮১৭৫৭২৩৬৩। কৃষকের সেবায় কৃষির উন্নয়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিংগাইর, মানিকগঞ্জ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আধুনিক প্রযুক্তিসমূহ কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে নিরলস কাজ করে যাবে।
লেখক : কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, সিংগাইর, মানিকগঞ্জ। মোবাইল : ০১৬৮০০৮৩২৪৭। ই- মেইল : ংযধহঃধরংষধস২০৭@মসধরষ.পড়স